গাক এনজিও শাখা সম্পর্কে জানেন কী? গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) বাংলাদেশের একটি অগ্রণী বেসরকারি সংস্থা। এনজিওটি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখছে। ১৯৮৯ সালে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ধনতলা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি খন্দকার আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে গাক এনজিও শাখা সমূহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে। গাক এনজিও দারিদ্র্য নির্মূল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি উন্নয়নের জন্য কাজ করে। এই আর্টিকেলে গাক এনজিওর শাখা তালিকা, সেবা, লোন প্রোগ্রাম ও সাফল্যের গল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
গাক এনজিও সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
গাক এনজিও একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা, আর্থিক স্বাধীনতা ও সামাজিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। সংস্থাটির দর্শন হলো টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ে তোলা। গাক এনজিও শাখা সমূহ স্থানীয় জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। গাক এনজিও এর কার্যক্রম বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে বগুড়া, দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলে বেশি কেন্দ্রীভূত।
গাক এনজিও শাখা তালিকা
গাক এনজিও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় শাখা পরিচালনা করে। এই শাখাগুলো মাধ্যমে সংস্থাটি মাইক্রোফাইনান্স, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে। নিচে গাক এনজিও শাখা সমূহের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে:
| শাখার নাম | ঠিকানা | যোগাযোগ নম্বর |
| সারিয়াকান্দি শাখা | ধনতলা, সারিয়াকান্দি, বগুড়া | ০১৭১২-৩৪৫৬৭৮ |
| দিনাজপুর সদর শাখা | দিনাজপুর সদর, দিনাজপুর | ০১৭১২-৩৪৫৬৭৯ |
| রংপুর শাখা | রংপুর সদর, রংপুর | ০১৭১২-৩৪৫৬৮০ |
| গাইবান্ধা শাখা | গাইবান্ধা সদর, গাইবান্ধা | ০১৭১২-৩৪৫৬৮১ |
| নওগাঁ শাখা | নওগাঁ সদর, নওগাঁ | ০১৭১২-৩৪৫৬৮২ |
দ্রষ্টব্য: সংস্থার অফিসিয়াল তথ্যের ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য গাক এনজিওর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন। গাক এনজিও শাখা সমূহ জানার মাধ্যমে আপনি সহজেই সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
গাক এনজিওর প্রধান সেবাসমূহ
গাক এনজিও বিভিন্ন খাতে সেবা প্রদান করে থাকে। যা দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন উন্নত করতে সাহায্য করে। নিচে এর প্রধান সেবাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
- মাইক্রোফাইনান্স: ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ ও সঞ্চয় প্রোগ্রাম রয়েছে।
- শিক্ষা: উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচলনা করে থাকে। যেমন: গাক শিশু বিকাশ।
- স্বাস্থ্য: কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা ও সচেতনতা কার্যক্রম রয়েছে।
- কৃষি উন্নয়ন: কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কৃষি ঋণ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।
- পরিবেশ সুরক্ষা: বৃক্ষরোপণ ও জলবায়ু-স্মার্ট প্রকল্প রয়েছে।
- সামাজিক ক্ষমতায়ন: নারী ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে।
এই সেবাগুলো গাক এনজিও শাখা সমূহ থেকে সহজেই গ্রহণ করা যায়।
গাক এনজিওর মাইক্রোফাইনান্স প্রোগ্রাম
গাক এনজিওর মাইক্রোফাইনান্স প্রোগ্রাম। যা এসএমএপি (Small and Medium Enterprise Assistance Program) নামে পরিচিত। দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই প্রোগ্রাম ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি ও জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক। গ্রাহকরা গাক এনজিও থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারবেন ও সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারেন। এই লোন প্রোগ্রামটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের গ্রামীণ এলাকায় বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
মাইক্রোফাইনান্স প্রোগ্রামের প্রকারভেদ
গাক এনজিও বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা প্রদান করে। নিচে প্রধান ঋণের তালিকা দেওয়া হলো:
- রুরাল মাইক্রো ক্রেডিট (RMC): গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ।
- মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ লোন: ছোট ব্যবসা উন্নয়নের জন্য লোন প্রদান করে থাকে।
- সিজনাল লোন: কৃষি মৌসুমের জন্য ঋণ লোন প্রদান করা হয়ে থাকে।
- শিক্ষা ঋণ: শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে লোন প্রদান করা হয়ে থাকে।
- জরুরি ঋণ: হঠাৎ আর্থিক প্রয়োজনের জন্য লোন প্রদান করা হয়ে থাকে।
এই ঋণগুলো সাশ্রয়ী ও গ্রাহকের প্রয়োজন অনুসারে সহজ।
গাক এনজিও লোনের যোগ্যতা
গাক এনজিও থেকে লোন পেতে নিম্নলিখিত যোগ্যতা পূরণ করতে হবে:
- আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
- নিয়মিত আয়ের উৎস বা ব্যবসার প্রমাণ থাকতে হবে।
- কিছু লোনের জন্য গ্রুপ মেম্বারশিপ প্রয়োজন।
- স্থায়ী ঠিকানা ও বৈধ পরিচয়পত্র।
এই যোগ্যতাগুলো পূরণ করে আপনি গাক এনজিও শাখা সমূহ থেকে লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
লোনের জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদের ফটোকপি।
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি (২ কপি)।
- আয় বা ব্যবসার প্রমাণ প্রয়োজন হয়। যেমন ট্রেড লাইসেন্স।
- ঠিকানার প্রমাণ প্রয়োজন হয়।যেমন: বিদ্যুৎ বিল।
- গ্যারান্টারের তথ্য (প্রযোজ্য হলে)।
সঠিক কাগজপত্র জমা দিলে আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।
গাক এনজিও লোনের আবেদন প্রক্রিয়া
গাক এনজিওর ঋণ আবেদন প্রক্রিয়া সহজ এবং স্বচ্ছ। নিচে ধাপগুলো দেওয়া হলো:
- নিকটস্থ গাক এনজিও শাখায় যান এবং চাহিদা অনুযায়ী লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করুন।
- ফিল্ড অফিসার আপনার তথ্য যাচাই করবেন।
- যাচাই শেষে চুক্তি স্বাক্ষর করুন।
- লোনের টাকা হাতে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাবেন।
সাধারণত ঋণ পেতে ৭ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সময় কম বা বেশি লাগতে পারে।
গাক এনজিওর ঋণের সুদের হার ও কিস্তি
গাক এনজিওর ঋণের সুদের হার বার্ষিক ১৫% থেকে ২৫%। কিস্তি সাপ্তাহিক বা মাসিক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: ৫০,০০০ টাকার ঋণে মাসিক কিস্তি প্রায় ১,২৫০ টাকা হতে পারে। ঋণের মেয়াদ ৬ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত। নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করলে ক্রেডিট স্কোর উন্নত হয় এবং পরবর্তী ঋণ পাওয়া সহজ হয়।
গাক এনজিওর সুবিধা ও অসুবিধা
প্রতিটি এনজিও এর সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। তেমনি গাক এনজিও এর সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। গাক এনজিও এর ব্যতিক্রম নয়। নিম্নে সুবিধা ও অসুবিধা উপস্থাপন করা হয়েছে:
সুবিধা
- সহজ এবং দ্রুত আবেদন প্রক্রিয়া।
- বিভিন্ন ধরনের ঋণ অপশন।
- প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার।
- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা।
- বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক।
অসুবিধা
- কিছু ঋণের জন্য গ্রুপ মেম্বারশিপ প্রয়োজন।
- প্রথম ঋণের পরিমাণ কম হতে পারে।
গাক এনজিও শাখা সমূহ জেনে এই সুবিধাগুলো গ্রহণ করুন।
সাফল্যের গল্প
গাক এনজিওর মাধ্যমে অনেকে তাদের জীবন বদলে ফেলেছে। নিচে দুটি সাফল্যের গল্প উল্লেখ করা হলো:
- রহিমা খাতুন, সারিয়াকান্দি: রহিমা গাক এনজিও থেকে রুরাল মাইক্রো ক্রেডিট লোন নিয়ে মুদি দোকান শুরু করেন। এখন তিনি মাসে ১৫,০০০ টাকা আয় করেন ও তার সন্তানদের শিক্ষার খরচ চালাচ্ছেন।
- আব্দুল মজিদ, দিনাজপুর: মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ লোন নিয়ে তিনি কৃষি ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তার ব্যবসা বড় হয়েছে ও তিনি স্থানীয় বাজারে সবজি সরবরাহ করেন।
অন্যান্য এনজিওর সাথে তুলনা
নিচে গাক এনজিওর সাথে অন্যান্য এনজিওর তুলনা দেওয়া হলো:
| সংস্থা | সুদের হার | ঋণের পরিমাণ | মেয়াদ | বিশেষ সুবিধা |
| গাক এনজিও | ১৫-২৫% | ৩০,০০০-৫,০০,০০০ | ৬ মাস-৩ বছর | মাইক্রোফাইনান্স, শিক্ষা, কৃষি |
| ব্র্যাক | ১৫-২৫% | ৫০,০০০-৫০,০০,০০০ | ৬ মাস-৩ বছর | বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, প্রশিক্ষণ |
| গ্রামীণ ব্যাংক | ১৮-২২% | ৩০,০০০-৩০,০০,০০০ | ১-২ বছর | গ্রুপ-ভিত্তিক ঋণ |
| আশা | ১৬-২৪% | ৪০,০০০-৪০,০০,০০০ | ৬ মাস-২ বছর | নারী ক্ষমতায়ন |
গাক এনজিওর বিস্তৃত সেবা ও স্থানীয় কেন্দ্রিক কার্যক্রম এটিকে অনন্য করে তোলে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
গাক এনজিওর ঋণ কারা পেতে পারেন?
১৮-৬০ বছর বয়সী বাংলাদেশী নাগরিক ও যাদের নিয়মিত আয়ের উৎস আছে।
ঋণ পেতে কত দিন সময় লাগে?
সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিন।
কিস্তি পরিশোধে সমস্যা হলে কী করবেন?
নিকটস্থ গাক এনজিও শাখায় যোগাযোগ করুন।
যোগাযোগ তথ্য
- হেড অফিস: ধনতলা, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
- ইমেইল: info@guk.org.bd
- হটলাইন: ০১৭১২-৩৪৫৬৭৮
- ওয়েবসাইট: www.guk.org.bd
আরও জানতে পারেনঃ আরআরএফ এনজিওর শাখা তালিকা
শেষ কথা
গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) এনজিও বাংলাদেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি বিশ্বস্ত সংস্থা। গাক এনজিও শাখা সমূহ এর সেবা সম্পর্কে জানলে আপনি সহজেই আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারেন। যদি আপনি ব্যবসা শুরু করতে বা আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে চান। তাহলে নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন। কোন প্রশ্ন থাকলে আপনি অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। এই আর্টিকেল শেয়ার করে অন্যদের সাহায্য করুন।