আধুনিক জীবনের চাপে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। প্রত্যেক মানুষই স্বপ্ন দেখে একটি সুখী ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার। কিন্তু কীভাবে ছোট ছোট সঞ্চয়ের মাধ্যমে বড় সাফল্য অর্জন করা যায়? উত্তর হলো জনতা মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিম (JMDS)। জনতা ব্যাংক পিএলসি কর্তৃক পরিচালিত এই স্কিমটি গ্রাহকদের নির্দিষ্ট মেয়াদে নিয়মিত কিস্তি জমা দিয়ে মেয়াদ শেষে ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি অর্জনের সুযোগ দেয়। এই আর্টিকেলে আমরা এইজনতা মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিমের বিস্তারিত বিষয়বস্তু, সুবিধা, শর্তাবলী এবং কীভাবে এটি আপনার জীবনকে সুখী করতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। শেষ পর্যন্ত পড়ে আপনার আর্থিক পরিকল্পনাকে নতুন দিকে এগিয়ে নিন।
জনতা ব্যাংক
জনতা ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, যা ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিতা লাভ করে। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত যার প্রধান কার্যালয় ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত। ব্যাংকটি বাংলাদেশজুড়ে ৯২৫টিরও বেশি শাখা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪টি বিদেশী শাখা পরিচালনা করে। জনতা ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিম, লোন, এবং আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে। জনতা মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিম এর মতো উদ্ভাবনী পরিকল্পনা এই ব্যাংককে জনপ্রিয় করে তুলেছে। ব্যাংকের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং রাষ্ট্রীয় সমর্থন এটিকে গ্রাহকদের কাছে বিশ্বস্ত করে।
জনতা মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিম কী?
জনতা মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিম (JMDS) হলো এমন একটি সঞ্চয় পরিকল্পনা । যেখানে আপনি নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিয়ে মেয়াদ শেষে ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি অর্জন করতে পারেন। এই স্কিমটি ৬% চক্রবৃদ্ধি সুদের হারে পরিচালিত হয়, যা আপনার সঞ্চয়কে দ্রুত বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এটি বিশেষভাবে তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যারা ছোট ছোট কিস্তির মাধ্যমে বড় আর্থিক লক্ষ্য অর্জন করতে চান। এই স্কিমের মাধ্যমে আপনি আপনার স্বপ্ন—যেমন বাড়ি কেনা, শিক্ষা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান—সহজে সফল করতে পারবেন।
জনতা মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিমের বৈশিষ্ট্য
-
নমনীয় মেয়াদ: ৩ বছর থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে স্কিমে অংশগ্রহণ করা যায়।
-
চক্রবৃদ্ধি সুদ: ৬% হারে সুদ যা সঞ্চয়ের মূল্য বাড়ায়।
-
সাশ্রয়ী কিস্তি: মেয়াদের ওপর ভিত্তি করে কিস্তির পরিমাণ কমে যায়, যা সকল শ্রেণির মানুষের জন্য সহজ।
-
নিরাপত্তা: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের নিরাপদ পরিচালনা।
-
আকর্ষণীয় বোনাস: মেয়াদ শেষে অতিরিক্ত সুবিধা।
মাসিক কিস্তির পরিমাণ
স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য নিম্নলিখিত মেয়াদ ও কিস্তির বিবরণ:
-
৩ বছর: ২৪,৯০০ টাকা
-
৪ বছর: ১৮,০৩০ টাকা
-
৫ বছর: ১৩,৯০০ টাকা
-
৬ বছর: ১১,১৬০ টাকা
-
৭ বছর: ৯,২২০ টাকা
-
৮ বছর: ৭,৭৬০ টাকা
-
৯ বছর: ৬,৬৪০ টাকা
-
১০ বছর: ৫,৭৫০ টাকা
-
১২ বছর: ৪,৪১০ টাকা
-
১৫ বছর: ৩,১৪০ টাকা

এই কিস্তিগুলো নির্দিষ্ট হিসেবে গণনা করা হয়েছে যাতে মেয়াদ শেষে ১০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। দীর্ঘ মেয়াদে কিস্তি কমে যাওয়ার কারণে এটি সাধারণ মানুষের জন্যও অ্যাক্সেসিবল।
কারা অংশগ্রহণ করতে পারে?
-
বাংলাদেশের যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক।
-
সুস্থ মানসিক অবস্থার মালিক।
-
একক বা যৌথভাবে হিসাব খোলা যায়।
-
একাধিক হিসাব খোলা যাবে না।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
-
জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি।
-
২ কপি সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
-
নমিনির ১ কপি ছবি (সত্যায়িত)।
-
আয়ের প্রমাণ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
স্কিমে যোগদানের পদ্ধতি
স্কিমে যোগদানের পদ্ধতি নিম্নে উপস্থাপন করা হয়েছেঃ
- ১. নিকটস্থ জনতা ব্যাংক শাখায় যান।
- ২. আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
- ৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন।
- ৪. ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাচাই করবে।
- ৫. হিসাব খোলার পর প্রতি মাসে কিস্তি জমা দিন।
হিসাব খোলার নিয়মাবলী
১. জনতা ব্যাংক লিমিটেড এর যেকোনো শাখায় নিম্নলিখিত নিয়মাচার পরিপালন সাপেক্ষে হিসাব খোলা যাবে:
-
জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটোকপি।
-
হিসাবধারীর সদ্য তোলা ২ (দুই) কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
-
নমিনির ১ (এক) কপি ছবি (হিসাবধারী কর্তৃক সত্যায়িত)।
-
সকল দলিলের ফটোকপি অত্র ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ও তদুর্ধ্ব কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে।
২. প্রাথমিক জমা: নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্ধারিত মাসিক কিস্তি অনুযায়ী।
৩. হিসাব খোলার ফর্মে বিশেষ করে হিসাবের মেয়াদ, মাসিক কিস্তি লেখার ক্ষেত্রে কোনরূপ কাটাকাটি, ঘষামাজা, উপরিলিখন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা পরিমার্জন গ্রহণযোগ্য হবে না।
৪. যুগ্ম নামে বা একই নামে একাধিক হিসাব খোলা যাবে না (অন্য শাখায় হলেও)।
৫. হিসাব স্থানান্তর ফি, হিসাব পরিচালনা ফি (AMF), এসএমএস (SMS) চার্জ বাবদ কোনো টাকা কর্তন করা হবে না।
সুদের হার এবং কিস্তি প্রদানের তারিখ
-
সুদের হার: ৬% চক্রবৃদ্ধি।
-
কিস্তি প্রদানের তারিখ: প্রতি মাসের ১১ তারিখ থেকে ২০ তারিখ (ব্যাংক খোলা থাকা সাপেক্ষে)।
মেয়াদপূর্তির পূর্বে হিসাব বন্ধে করণীয়
হিসাবধারী ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় সংশ্লিষ্ট শাখা প্রধানের বরাবরে লিখিত আবেদন করে হিসাব বন্ধ করতে পারবেন। লিখিত আবেদনের মাধ্যমে হিসাব বন্ধ করা হলে বা মেয়াদ উত্তীর্ণের আগে হিসাবধারীর মৃত্যু হলে নিম্নোক্ত নিয়মাবলী প্রযোজ্য:
- ১. ০১ (এক) বছর উত্তীর্ণ হওয়ার আগে হিসাব বন্ধ করা হলে বা মৃত্যু হলে সরকারি কর ও অন্যান্য পাওনা কর্তনের পর অবশিষ্ট টাকা ফেরত দেওয়া হবে (সুদ ছাড়া)।
- ২. ০১ (এক) বছরের বেশি কিন্তু ০৩ (তিন) বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করা হলে ৩% সরল সুদের সাথে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
- ৩. ০৩ (তিন) বছরের বেশি কিন্তু ০৫ (পাঁচ) বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করা হলে ৪% সরল সুদের সাথে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
- ৪. ০৫ (পাঁচ) বছরের বেশি কিন্তু ১০ (দশ) বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করা হলে ৫% সরল সুদের সাথে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
- ৫. ১০ (দশ) বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলে ৬% সরল সুদের সাথে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
- ৬. বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি-নিষেধ অনুযায়ী কোনো সার্ভিস চার্জ আদায় করা যাবে না।
- ৭. হিসাব বন্ধে সকল কর্তন ও সুদারোপ সঠিকভাবে হিসাব করে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
সুবিধা
-
আর্থিক নিরাপত্তা: মেয়াদ শেষে ১০ লাখ টাকা।
-
নিরাপদ বিনিয়োগ: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের গ্যারান্টি।
-
চক্রবৃদ্ধি সুদ: অতিরিক্ত মুনাফা।
-
নমনীয়তা: আপনার সুবিধামতো মেয়াদ নির্বাচন।
-
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: শিক্ষা, বিয়ে, বা ব্যবসার জন্য সহায়ক।
জনতা মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিমের গুরুত্ব
আমাদের সমাজে অনেকে আর্থিক সঞ্চয়ের সঠিক পথ খুঁজে পান না। জনতা মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিম এমন একটি উপায় যা ছোট ছোট কিস্তির মাধ্যমে বড় সঞ্চয়ের স্বপ্ন সফল করে। এটি বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবার, যুবক-যুবতী, এবং ব্যবসায়ীদের জন্য উপযোগী। নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি এটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সহায়তা করে। এই স্কিমের মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানের শিক্ষা, বিয়ের খরচ, বা নিজের পেনশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।
তুলনা: অন্যান্য স্কিমের সাথে
জনতা ব্যাংকের এই স্কিম অন্যান্য ব্যাংকের সঞ্চয় পরিকল্পনার তুলনায় বেশি নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী। অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকের স্কিমে উচ্চ সুদ হলেও ঝুঁকি বেশি থাকে। জনতা ব্যাংকের রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি এটিকে অন্যতম করে। উদাহরণস্বরূপ, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সুদের হার ৮-১০% হলেও, তাদের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
-
কিস্তি পরিশোধের সময় নিয়ে চিন্তিত হবেন না।
-
ব্যাংকের শর্তাবলী পড়ে নিন।
-
আর্থিক পরিকল্পনা করার আগে পরামর্শ নিন।
-
নিয়মিত জমা দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
জনতা মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিমের ভবিষ্যৎ
এই স্কিমটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। শিক্ষা, বিয়ে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা গৃহ নির্মাণের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত উপায়। দীর্ঘমেয়াদে এই স্কিম আপনাকে আর্থিক স্বাধীনতা দিতে পারে।
আরও জানতে পারেনঃ সাউথইস্ট ব্যাংক লোন ২০২৫ (আপডেট তথ্য)
জনতা ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ
-
ওয়েবসাইট: https://www.jb.com.bd
-
হেল্পলাইন: ১৬২৫৭
-
প্রধান কার্যালয়: মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
শেষ কথা
জনতা মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিম আপনাকে ছোট কিস্তির মাধ্যমে মিলিয়নেয়ার হওয়ার সুযোগ দেয়। এটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী, এবং ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণের একটি উপায়। আজই শুরু করুন এবং আপনার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করুন। কোনো প্রশ্ন থাকলে নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন।