ব্র্যাক এনজিও শাখা তালিকা ঢাকা শহরের জানেন কী আপনি? কেবল মাএ ব্রাক এনজিও গ্রামীণ পর্যায়ে নয় বরং শহরের মধ্যবিও মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ব্র্যাক এনজিও। ব্র্যাক এনজিও লোন বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা। যা বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক পরিচালনা করে। এই লোন প্রোগ্রামটি বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক ও নিম্ন-আয়ের পরিবারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যাতে তারা ধীরে ধীরে তাদের সাংসারিক জীবনে আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা ব্র্যাক এনজিও শাখা তালিকা ঢাকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানোর পাশাপাশি ব্র্যাক এনজিও এর প্রকারভেদ, আবেদন প্রক্রিয়া, সুবিধা ও সাফল্যের গল্প নিয়ে আলোচনা করবো।
ব্র্যাক এনজিও শাখা তালিকা ঢাকা
ঢাকা শহরে ব্রাক এনজিও ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। তবে নিচে ঢাকার ১০টি প্রধান ব্র্যাক এনজিও শাখার তালিকা দেওয়া হলো:
| শাখার নাম | ঠিকানা | যোগাযোগ নম্বর |
| মিরপুর শাখা | মিরপুর-১০, ঢাকা | ০১৭১২-৩৪৫৬৭৮ |
| মোহাম্মদপুর শাখা | মোহাম্মদপুর, রিং রোড, ঢাকা | ০১৭১১-১২৩৪৫৬ |
| গুলশান শাখা | গুলশান-১, ঢাকা | ০১৭১৩-৭৮৯০১২ |
| ধানমন্ডি শাখা | ধানমন্ডি-২৭, ঢাকা | ০১৭১৪-৫৬৭৮৯০ |
| উত্তরা শাখা | উত্তরা, সেক্টর-৪, ঢাকা | ০১৭১৫-৯৮৭৬৫৪ |
| বাড্ডা শাখা | মধ্য বাড্ডা, ঢাকা | ০১৭১৬-২৩৪৫৬৭ |
| যাত্রাবাড়ী শাখা | যাত্রাবাড়ী, ঢাকা | ০১৭১৭-৮৯০১২৩ |
| শ্যামপুর শাখা | শ্যামপুর, ঢাকা | ০১৭১৮-৪৫৬৭৮৯ |
| সাভার শাখা | সাভার, ঢাকা | ০১৭১৯-১২৩৪৫৬ |
| কেরানীগঞ্জ শাখা | কেরানীগঞ্জ, ঢাকা | ০১৭২০-৭৮৯০১২ |
ব্র্যাক এনজিও লোন কী?
ব্র্যাক এনজিও লোন হলো একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রোগ্রাম। যা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই ক্ষুদ্রঋণ বিশেষ করে ব্যবসা সম্প্রসারণ, কৃষি উন্নয়ন, শিক্ষা ও জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য দেওয়া হয়। ব্র্যাকের এই ঋণ প্রোগ্রাম ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই লোনের মাধ্যমে গ্রাহকরা সহজ শর্তে ঋণ পান ও সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে সহজে দ্রুততম সময়ে বা দীর্ঘ সময়ে লোন পরিশোধ করতে পারেন। এই লোন বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে উভয় অঞ্চলের মানুষের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্র্যাক এনজিও লোনের প্রকারভেদ
ব্র্যাক এনজিও বিভিন্ন ধরনের লোন প্রদান করে থাকে। এ সকল লোন বিশেষ করে গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকের এসকল লোনের মধ্যে রয়েছে:
- দিশারী লোন: ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার জন্য ৫০,০০০ থেকে ২০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রদান করে থাকে। এই লোন বিশেষ করে দোকান, হস্তশিল্প বা ছোট উৎপাদন ব্যবসার জন্য ব্র্যাক এনজিও প্রদান করে গ্রাহকদের।
- প্রগতি লোন: মাঝারি ও বড় ব্যবসার জন্য নূনতম ২০,০০,০০০ থেকে ৫০,০০,০০০ টাকা প্রদান করা হয় প্রগতি লোনে। এই লোন বিশেষ করে বড় বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। যেমন: বড় উৎপাদন কার্যক্রম ( মাছ চাষ ইত্যাদি)।
- কৃষি লোন: কৃষি ও পশুপালনের জন্য কৃষকেরা ৩০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ টাকা লোন পেয়ে থাকে। কৃষকরা এই ঋণ বীজ, সার ও পশুপালনের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।
- শিক্ষা লোন: শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সংক্রান্ত খরচ মেটানোর জন্য, যেমন স্কুল ফি বা শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করার ব্র্যাক ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে
- জরুরি লোন: স্বাস্থ্য, বিবাহ ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনের জন্য সাধারণত ২০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ টাকা ব্র্যাক ব্যাংক প্রদান করে থাকে।
ব্র্যাক এনজিও লোন গ্রাহকের বিভিন্ন প্রয়োজন অনুযায়ী নমনীয় ও সহজলভ্য হিসেবে বিবেচিত।
ব্র্যাক এনজিও লোনের যোগ্যতা
প্রতিটি এনজিও এর বেশ কিছু নীতিমাল রয়েছে। ব্র্যাক এনজিও লোন পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত যোগ্যতার প্রয়োজন:
- বয়স: আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- নাগরিকত্ব: বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
- আয়ের উৎস: নিয়মিত আয়ের উৎস বা ব্যবসার প্রমাণ থাকতে হবে।
- গ্রুপ মেম্বারশিপ: কিছু লোনের ক্ষেত্রে ব্র্যাকের গ্রুপ মেম্বার ( সভা সদস্য) হওয়া প্রয়োজন।
- ঠিকানা: স্থায়ী ঠিকানা এবং বৈধ পরিচয়পত্র থাকতে হবে।
সাধারণত এই যোগ্যতাগুলো নিশ্চিত করা হয়। যাতে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হয় গ্রাহকের।
ব্র্যাক এনজিও লোনের কাগজপত্র
প্রতিটি এনজিওর বেশ কিছু নীতিমালা রয়েছে আর তারা মূলত তাদের চাহিদা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারে বেশ কিছু কাগজপত্র গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। লোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিম্নরূপ:
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদের ফটোকপি।
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি (২ কপি)।
- ব্যবসা বা আয়ের প্রমাণপত্র (যেমন, ট্রেড লাইসেন্স বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট)।
- ঠিকানার প্রমাণ, যেমন বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিল।
- গ্যারান্টারের তথ্য ও পরিচয়পত্র (প্রযোজ্য হলে)।
এই কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দেওয়া হলে আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।
আবেদন প্রক্রিয়া
ব্র্যাক এনজিও লোন পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত ধাপ অনুসরণ করতে হবে:
- শাখায় যোগাযোগ: নিকটস্থ ব্র্যাক শাখায় যান ও লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- আবেদন ফরম: ব্র্যাকের প্রদত্ত আবেদন ফরম পূরণ করুন।
- কাগজপত্র জমা: প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সংযুক্ত করুন।
- যাচাই প্রক্রিয়া: ব্র্যাক এনজিও এর মাঠ কর্মী বা প্রতিনিধি আপনার তথ্য ও ব্যবসার বিবরণ যাচাই করবেন।
- চুক্তি স্বাক্ষর: যাচাইয়ের পর ঋণ মঞ্জুর হলে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করুন।
- ঋণ বিতরণ: আবেদনকৃত লোনের লোনের টাকা সাধারণত গ্রাহকের হাতে বা ব্যাংক একাউন্টে প্রদান করা হয়। এই প্রক্রিয়া সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিন সময় নেয়।
ব্র্যাক এনজিও কিস্তি ও সুদের হার
ব্র্যাক এনজিও লোন-এর সুদের হার সাধারণত ১৫% থেকে ২৫% বার্ষিক। যা বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতামূলক। কিস্তি সাপ্তাহিক বা মাসিক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:
- ১,০০,০০০ টাকার লোনের ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক কিস্তি প্রায় ২,৫০০ টাকা।
- মেয়াদকাল: ৬ মাস থেকে ৩ বছর।
- সুদের হার লোনের ধরন ও মেয়াদকালের উপর নির্ভর করে।
কিস্তি পরিশোধে নিয়মিততা বজায় রাখলে ক্রেডিট স্কোর উন্নত হয় ও ভবিষ্যতে বড় ঋণ পাওয়া সহজ হয়। তবে সুদের হার মূলত লোন নেওয়ার সময়ের উপর ও অর্থের উপর নির্ভর করে।
সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা:
- সহজ প্রক্রিয়া: আবেদন প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত।
- সহজ শর্ত: বিভিন্ন ধরনের লোন বিভিন্ন প্রয়োজন মেটায়।
- কম সুদ: অন্যান্য ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সুদের হার কম।
- প্রশিক্ষণ: ব্র্যাক ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
- স্থানীয় সেবা: ঢাকাসহ সারাদেশে শাখা রয়েছে।
অসুবিধা:
- গ্রুপ মেম্বারশিপ: কিছু লোনের জন্য গ্রুপে যোগদান করতে হয়।
- সীমিত পরিমাণ: প্রাথমিক ঋণের পরিমাণ কম হতে পারে।
- কিস্তির চাপ: নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের চাপ থাকতে পারে।
সাফল্যের উদাহরণ
রহিমা বেগম, ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ব্র্যাক এনজিও লোন নিয়ে তার সেলাই ব্যবসা শুরু করেন। ৫০,০০০ টাকার লোন নিয়ে তিনি দুটি সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। ব্র্যাকের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি ব্যবসা পরিচালনার দক্ষতা অর্জন করেন। এখন তিনি মাসে ২০,০০০ টাকা আয় করেন ও তার পরিবারের জীবনমান উন্নত হয়েছে। এছাড়া, মোহাম্মদ আলী নামে একজন কৃষক কৃষি লোন নিয়ে তার ফসল উৎপাদন দ্বিগুণ করেছেন। এই গল্পগুলো ব্র্যাক এনজিও লোন-এর প্রভাব তুলে ধরে।
অন্যান্য এনজিওর সাথে তুলনা
| সংস্থা | সুদের হার | লোনের পরিমাণ | মেয়াদকাল | বিশেষ সুবিধা |
| ব্র্যাক | ১৫-২৫% | ৫০,০০০-৫০,০০,০০০ | ৬ মাস-৩ বছর | প্রশিক্ষণ ও স্থানীয় শাখা |
| গ্রামীণ ব্যাংক | ১৮-২২% | ৩০,০০০-৩০,০০,০০০ | ১-২ বছর | গ্রুপ-ভিত্তিক ঋণ |
| আশা | ১৬-২৪% | ৪০,০০০-৪০,০০,০০০ | ৬ মাস-২ বছর | নারী ক্ষমতায়নের উপর ফোকাস |
FAQ
প্রশ্ন: ব্র্যাক এনজিও লোন কারা পেতে পারেন?
উত্তর: ১৮-৬০ বছর বয়সী বাংলাদেশের নাগরিকরা, যাদের আয়ের উৎস আছে।
প্রশ্ন: লোন পেতে কত দিন লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৭-১৪ দিন।
প্রশ্ন: কিস্তি পরিশোধে সমস্যা হলে কী করবেন?
উত্তর: নিকটস্থ ব্র্যাক শাখায় যোগাযোগ করুন; তারা বিকল্প সমাধান দিতে পারে।
প্রশ্ন: কি ধরনের ব্যবসার জন্য লোন পাওয়া যায়?
উত্তর: যেকোনো ক্ষুদ্র বা মাঝারি ব্যবসা, যেমন দোকান, কৃষি, বা হস্তশিল্প।
যোগাযোগ তথ্য
- হেড অফিস: ব্র্যাক সেন্টার, ৭৫ মহাখালী, ঢাকা-১২০৬।
- ইমেইল: info@brac.net
- হটলাইন: ১৬২২১
- ওয়েবসাইট: www.brac.net
আরও জানতে পারেনঃ পদক্ষেপ এনজিও শাখা সমূহ ২০২৫
শেষ কথা
ব্র্যাক এনজিও লোন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক ও নিম্ন-আয়ের পরিবারের জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ। ব্র্যাক এনজিও সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে থাকে ও আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে। ব্র্যাকের বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক, প্রশিক্ষণ, এবং সহজ কিস্তি ব্যবস্থা এটিকে অনন্য করে তোলে। আপনি যদি ব্যবসা শুরু বা সম্প্রসারণের কথা ভাবছেন, তাহলে নিকটস্থ ব্র্যাক শাখায় যোগাযোগ করুন। আজই আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যান এবং ব্র্যাক এনজিও লোন-এর মাধ্যমে আর্থিক স্বাবলম্বন অর্জন করুন।