আপনি যদি গাক এনজিও লোন সম্পর্কে কোনো তথ্য না জেনে থাকেন, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কারণ আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) এনজিওর লোন সেবা সম্পর্কে সকল তথ্য জানাবো। আমরা চেষ্টা করেছি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এনজিওর লোনের সকল দিক আপনাদের কাছে উপস্থাপন করতে। তাহলে দেরি কেন, চলুন আলোচনা শুরু করা যাক। তবে প্রথমে আমরা এনজিও সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য জেনে নেব।
গাক এনজিও লোন কী?
গাক এনজিও লোন হলো এমন একটি আর্থিক সুবিধা যা দরিদ্র ও অতি-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক ও নিম্ন আয়ের পরিবারকে ব্যবসা শুরু, কৃষি উন্নয়ন বা জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি সহজ প্রক্রিয়ায় দ্রুত প্রাপ্ত হয়, যেখানে আপনি গ্রুপ-ভিত্তিক সদস্যপদের মাধ্যমে অর্থ নিয়ে সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে ফেরত দিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রথমবারের লোন ১০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। এই লোনগুলোর মূল উদ্দেশ্য দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক উন্নয়ন। এনজিওটি স্বচ্ছতা এবং সাশ্রয়ী সুদের উপর জোর দেয়, যা এটিকে অন্যান্য লোন থেকে আলাদা করে। সাধারণত, লোনের পরিপূর্ণতা ১ বছরের মধ্যে হয়, যা আপনার আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই ধারণা থেকে শুরু করে আমরা বিস্তারিত জানব প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য দিক।
আরও জানতে পারেন: ওয়ান ব্যাংক পার্সোনাল লোন
গাক এনজিও লোনের প্রকারভেদ
গাক এনজিওর লোন প্রধানত ক্ষুদ্র ঋণ-ভিত্তিক, যা গ্রাহকের প্রয়োজন অনুসারে ভাগ করা হয়েছে। নিচে একটি টেবিলে প্রধান প্রকারভেদগুলোর সারাংশ দেওয়া হলো (মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রামের অধীনে):
| লোনের নাম | লোনের পরিমাণ (টাকা) | মেয়াদ (বছর) | উদ্দেশ্য | বিশেষত্ব |
|---|---|---|---|---|
| কৃষি লোন | ৫,০০০ – ৫০,০০০ | ১ | ফসল, সবজি, ফল-ফুল উৎপাদন | কৃষকদের জন্য, IGAs-ভিত্তিক |
| পোল্ট্রি ও লাইভস্টক লোন | ৫,০০০ – ৫০,০০০ | ১ | মুরগি-হাঁস পালন, গরু মোটা করা | দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য |
| অ্যাগ্রো-প্রসেসিং লোন | ১০,০০০ – ৫০,০০০ | ১ | কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ও প্যাকেজিং | ছোট-মাঝারি প্রসেসরদের জন্য |
| মাংস-দুধ প্রসেসিং লোন | ১০,০০০ – ৫০,০০০ | ১ | মাংস-দুধ প্রক্রিয়াকরণ | উদ্যোক্তাদের জন্য |
| মৎস্য লোন | ৫,০০০ – ৫০,০০০ | ১ | মাছ চাষ | মৎস্যজীবীদের জন্য |
এই টেবিল থেকে দেখা যায়, প্রত্যেক লোনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বিভিন্ন গ্রাহকের চাহিদা মেটায়। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি লোন কৃষকদের জন্য আদর্শ, যখন পোল্ট্রি লোন দ্রুত আয়ের জন্য।
গাক এনজিও সম্পর্কে তথ্য
গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) এনজিও ১৯৮৯ সালে খন্দকার আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় পর্যায়ের অলাভজনক সংস্থা, যার প্রধান লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়ন। গাক বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ১০ লক্ষ পরিবারের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সৌর বিদ্যুৎ, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করে। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় বগুড়ার বনানীতে অবস্থিত গাক টাওয়ারে। গাক এনজিও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ইফাদ এবং ডানিডার মতো আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থার সহায়তায় কার্যক্রম চালায়। এটি মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এর নিয়ম মেনে চলে এবং ৩৬০টি শাখা, ৪১টি এরিয়া অফিস, ১০টি জোনাল অফিস এবং ৪টি রিজিওনাল অফিসের মাধ্যমে কাজ করে।
গাক এনজিও লোন পাওয়ার যোগ্যতা
লোন পাওয়ার জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ করে এনজিও গ্রাহকের আর্থিক ও সামাজিক স্থিতি। নিচের টেবিলে বিস্তারিত দেওয়া হলো:
| বিষয় | বিবরণ |
|---|---|
| বয়স | ন্যূনতম ১৮ বছর থেকে ৬০ বছরের মধ্যে |
| নাগরিকত্ব | বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক, নির্দিষ্ট জেলার বাসিন্দা |
| আয়ের উৎস | স্থিতিশীল আয়ের উৎস বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা |
| ঋণখেলাপি | অন্য কোনো ব্যাংক/এনজিও থেকে ঋণখেলাপি নয় |
| জামিনদার | একজন বিশ্বস্ত জামিনদার থাকতে হবে |
| সদস্যপদ | গাক এনজিওর সদস্য হতে হবে |
জয়েন্ট অ্যাপ্লিকেশন (গ্রুপ) অনুমোদিত। এই যোগ্যতা পূরণ করলে লোন অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়ে।
আরও জানতে পারেন: ব্র্যাক ব্যাংক লোন সুবিধা
গাক এনজিও লোন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
লোন আবেদনের জন্য কয়েকটি মৌলিক কাগজপত্র দরকার। সাধারণত, এগুলো হলো:
- আবেদন ফর্ম: গাক এনজিওর শাখা থেকে সংগ্রহ করা ফর্ম পূরণ।
- পরিচয়পত্র: জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- ছবি: ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- আয়ের প্রমাণ: ব্যবসা বা আয়ের উৎসের প্রমাণ (যদি প্রযোজ্য)।
- গ্যারান্টরের তথ্য: জামিনদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং ছবি।
- অন্যান্য: শাখার প্রয়োজন অনুসারে অতিরিক্ত কাগজপত্র।
এই কাগজপত্রগুলো সঠিক হলে প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। এনজিওর ফর্মে চেকলিস্ট অনুসরণ করুন।
গাক এনজিও লোন আবেদন
আবেদন করা খুব সহজ। ধাপসমূহ:
- সদস্যপদ গ্রহণ: নির্দিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করে সদস্য হোন।
- গ্রুপ গঠন: একটি গ্রুপে (সভায়) যোগ দিন।
- ফর্ম পূরণ: নিকটস্থ শাখা থেকে আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করে পূরণ করুন।
- কাগজপত্র জমা: সব ডকুমেন্টসহ জমা দিন।
- যাচাই ও অনুমোদন: তথ্য যাচাইয়ের পর ৩-১৫ কর্মদিবসে অনুমোদন।
- বিতরণ: টাকা হাতে বা অ্যাকাউন্টে জমা।
ডিজিটাল অপশনের জন্য ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।
গাক এনজিও লোন পদ্ধতি
প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ এবং গ্রাহক-বান্ধব। গ্রুপ-ভিত্তিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে সামাজিক চাপের মাধ্যমে পরিশোধ সহজ করা হয়। সুদের হার নির্ধারণ করে কিস্তি ক্যালকুলেট করা হয়। বিলম্বে অতিরিক্ত চার্জ প্রযোজ্য। এমআরএ-এর নিয়ম মেনে চলে।
গাক এনজিও লোনের সুদের হার
২০২৫ সালের অক্টোবর অনুসারে, গাক এনজিওর লোনের সুদের হার বার্ষিক ১৪% থেকে ২৪% এর মধ্যে, যা লোনের পরিমাণ ও মেয়াদের উপর নির্ভর করে। সাধারণত ফ্ল্যাট রেটে সংগ্রহ করা হয়। সঠিক রেটের জন্য শাখায় যোগাযোগ করুন, কারণ এটি পরিবর্তনশীল।
গাক এনজিও লোনের সুবিধা
- দ্রুত প্রসেসিং: ৩-১৫ দিনের মধ্যে অনুমোদন।
- জামানতবিহীন: গ্রুপ-ভিত্তিক দায়বদ্ধতা।
- স্বল্প সুদ: তুলনামূলকভাবে কম।
- প্রশিক্ষণ: ব্যবসায়িক পরামর্শ সহ।
- নারী ক্ষমতায়ন: নারীদের অগ্রাধিকার।
- নমনীয় কিস্তি: সাপ্তাহিক/মাসিক।
- সাশ্রয়ী: দরিদ্রদের জন্য ডিজাইন করা।
এই সুবিধাগুলো গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
গাক এনজিও শাখা সমূহ
গাক এনজিও ৬৪টি জেলায় ৩৬০টি শাখা, ৪১টি এরিয়া অফিস, ১০টি জোনাল অফিস এবং ৪টি রিজিওনাল অফিসের মাধ্যমে কাজ করে। নিচে প্রধানগুলোর উদাহরণ:
- প্রধান কার্যালয়: গাক টাওয়ার, বনানী, বগুড়া।
- ঢাকা শাখা: বিভিন্ন এলাকায়।
- চট্টগ্রাম শাখা: রাঙ্গামাটি ইত্যাদি।
- সিলেট শাখা: স্থানীয় অফিস।
সম্পূর্ণ লিস্টের জন্য ওয়েবসাইট দেখুন।
গাক এনজিও হেড অফিস নাম্বার
হেড অফিস: গাক টাওয়ার, বনানী, বগুড়া। কনট্যাক্ট: +৮৮০২৫৮৯৯০৪৭৯৫, মোবাইল: ০১৭৩৩-৩৬৬৯৯৯। ইমেইল: info@guk.org.bd। ওয়েবসাইট: www.guk.org.bd। ২৪/৭ হেল্পলাইন: নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন।
গাক এনজিও লোনের কিস্তি ব্যবস্থা
নিচের টেবিলে উদাহরণস্বরূপ কিস্তির বিবরণ:
| ঋণের পরিমাণ | কিস্তির ধরন | প্রতি কিস্তির পরিমাণ | মেয়াদ |
|---|---|---|---|
| ১০,০০০ টাকা | সাপ্তাহিক | ২০০-৩০০ টাকা | ১ বছর |
| ২০,০০০ টাকা | মাসিক | ১,৮০০-২,২০০ টাকা | ১ বছর |
| ৫০,০০০ টাকা | মাসিক | ৪,৫০০-৫,০০০ টাকা | ১ বছর |
নিয়মিত পরিশোধ করলে বড় লোনের সুযোগ।
গাক এনজিও লোনের প্রভাব
গাক এনজিওর লোন দরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ: রাঙ্গামাটির ফুল কুমার চাকমা ২০,০০০ টাকা লোন নিয়ে মুদি দোকান শুরু করে মাসে ১৫,০০০ টাকা আয় করছেন। এটি নারী ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক পরিবর্তন ঘটায়।
গাক এনজিও লোন সম্পর্কিত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
লোন পেতে কতদিন লাগে?
৩-১৫ কার্যদিবস।
জামানত লাগে?
না, গ্রুপ-ভিত্তিক।
শুধু ব্যবসার জন্য?
না, কৃষি/শিক্ষা/জীবনযাত্রার জন্যও।
কিস্তি সমস্যায় কী করব?
শাখায় যোগাযোগ করুন।
শেষ কথা
গাক এনজিও লোন সেবা নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকর সমাধান। সহজ শর্ত, স্বল্প সুদ ও নমনীয় কিস্তির কারণে জনপ্রিয়। যদি যোগ্যতা পূরণ করেন, তাহলে আজই সদস্যপদ নিন এবং আবেদন করুন। শর্তাবলী পড়ে বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন। আরও তথ্যের জন্য অফিসিয়াল সাইট ভিজিট করুন। সফলতা কামনা করি!